সাজেক ভ্যালি কোথায় অবস্থিত এবং সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত

 




সাজেক ভ্যালি এক ভূস্বর্গের নাম

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরে মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত অত্যন্ত বিখ্যাত একটি পর্যটন স্থল। এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের অন্তর্গত। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই প্রাকৃতিক ভূস্বর্গ থেকে দেখা যায় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি। আর তুলোর মত সাদা সাদা মেঘ। রাঙ্গামাটি প্রায় অনেকটাই দেখা যায় নৈসর্গিক এই সাজেক ভ্যালি থেকে। এজন্য একে রাঙ্গামাটির ছাদ বলেও অভিহিত করা হয়।
শিল্পীর তুলিতে আঁকা এই সাজেক ভ্যালি যেন ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ পাল্টায়। আশ্চর্যজনক সুন্দর এই জায়গায় একই দিনে প্রকৃতির তিন রকমের রূপের দেখা মিলবে। কখনো গরম, কখনো বৃষ্টি কিংবা হঠাৎ করেই যেন মেঘের কুয়াশায় হারিয়ে যায় চারপাশ। তুলোর মতো সাদা মেঘের স্তর যেন হারিয়ে গেছে দূরে বহু দূরে যেখানে সূর্য অস্ত যায় আবার যেখানে সূর্য উদয় হয়।
সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কংলাক পাহাড়। আর সাজেক ভ্যালির শেষ গ্রাম হচ্ছে কংলাক পাড়া। যেখানে লুসাই জনগোষ্ঠীদের বসবাস। এই এলাকা থেকে দেখা যায় ভারতের লুসাই পাহাড়। যেই পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়েছে কর্ণফুলী নদীর।

সাজেক মূলত তিনটি পাড়া নিয়ে গঠিত। রুইলুই পাড়া, হামারী পাড়া এবং কংলাক পাড়া। রুইলুইপাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। আর কম লাখ পারার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। আর এটি সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ উচ্চতা।
সাজেক মূলত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের বসবাস। তাদের মধ্যে রয়েছে, লুসাই, পাংকুয়া ও ত্রিপুরা। সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প, সেখানে হেলিপ্যাড রয়েছে।

কোন মৌসুমে সাজেক যাবেন

সারা বছরই সাজেক ভ্রমণ করা যায় তবে বর্ষাকাল সাজেক কিংবা যেকোনো পাহাড়ি এলাকা ভ্রমণের জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বর্ষায় পাহাড়ি এলাকায় বা সাজেক ভ্যালি না যাওয়াই উত্তম। সাজেক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে শরৎকাল। তখন টানা বর্ষণের তেমন কোনো ঝুঁকি থাকে না। আকাশে সাদা সাদা মেঘ উড়ে বেড়ায়। তবে শীতের আগ পর্যন্ত এবং বসন্তকালও সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়।


কোথায় থাকবেন?

সাজেক ভ্যালিতে গিয়ে থাকার ব্যাপারে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। কারণ পর্যটকদের থাকার জন্য সেখানে রয়েছে প্রায় শখানেক বেসরকারি রিসোর্ট। যেখানে আপনি চাইলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করতে পারবেন। আসুন জেনে নেই তেমন কিছু রিসোর্ট এর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য...

১. সাজেক রিসোর্ট

এই রিসোর্ট টি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত। এই রিসোর্টে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে চারটি কক্ষ এবং খাবারের জন্য রয়েছে শুধু ব্যবস্থা।

২. সারা রিসোর্ট

এই রিসটটি রইলই পাড়ায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে চারটি রুম যার তিনটি অ্যাটাচ বাথ এবং একটি কমন বাথ। রুমগুলো টিনের তৈরি আর একটু ছোট। প্রতি রুমে দুইজন থাকা যাবে এমন একটি করে খাট রয়েছে।

৩. মেঘ মাচাং রিসোর্ট

এই রিসোর্টে রয়েছে মোট পাঁচটি কটেজ যার কিছু বাঁশের তৈরি আর কিছু কাঠের তৈরি কটেজ। সবগুলো কটেজেই রয়েছে এটাচ বাথরুম। সাজেক এর সেরা ভিউ পাবার জন্য এই রিসোর্টটি বিখ্যাত। এই রিসোর্টে কটেজ গুলোর ভাড়া পড়বে সাধারণত 3500 থেকে 4500 টাকা।

৪. আলো রিসোর্ট

এটি সাজেকে থাকার জন্য গড়ে ওঠা প্রথম রিসোর্ট। এটি রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। কম খরচে থাকার জন্য এটি সেরা অপশন। এই রিসোর্টে ছয়টি রুম রয়েছে যার মধ্যে চারটি ডাবল রুম। প্রতিরাতে রুমগুলোর ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

৫. আদিবাসী ঘর

আদিবাসী ঘর গুলোয় আপনি জনপ্রতী ১৫০ থেকে 300 টাকায় থাকতে পারবেন। এই ঘরগুলো পরিবার কিংবা কাপলদের জন্য আদর্শ নয়। তবে বন্ধুরা মিলে কম খরচে থাকতে চাইলে এই ঘরের চেয়ে উত্তম আর নেই।

কোথায় খাবেন?

সাজেকে থাকার জন্য যেমন রয়েছে রিসোর্ট তেমনি খাবার জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এখানকার রেস্টুরেন্টে প্রতিবেলা 200 টাকার ডাল সবজি আর দেশীয় মুরগির প্যাকেজ পাওয়া যায়। কাশবন রেস্টুরেন্ট, মারুতি দিদির রেস্টুরেন্ট এদের মধ্যে অন্যতম রেস্টুরেন্ট। ডাল ভাত ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে সাজেকে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট গুলোতে।


ঢাকা থেকে সাজেক যাবেন কিভাবে?

হানিফ, শ্যামলী ও অন্যান্য পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। খাগড়াছড়ি থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারবেন সাজেক। এসব গাড়িগুলো সাধারণত একদিন বা দুই দিনের জন্য রিজার্ভ করা হয়। একটি গাড়িতে ১২ থেকে ১৪ জন যাওয়া যায়। সময় এবং ঘুরার স্থান অনুযায়ী এগুলোর ভাড়া ভিন্ন ভিন্ন হয়। যা ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
তাছাড়া খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারেন। খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা যেতে হলে বাসে জনপ্রতী ৪৫ থেকে ৬০ টাকা পড়বে। আর মোটরসাইকেলে পড়বে ১০০ টাকা। দীঘিনালা থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালি।

Post a Comment

1 Comments