জাফলং সহ সিলেটের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

 




পর্যটন নগরী সিলেট

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন নগরী হচ্ছে সিলেট। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই সিলেট নগরী যা বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। সিলেটে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসীদের বসবাস। এদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। জাফলং, হাকালুকি হাওর, বিছানাকান্দি, চা বাগান, রাতারগুল জলাবন, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, পাহাড় সব মিলিয়ে বৈচিত্রময় এই সিলেট নগরী হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী।

সিলেটের 15 টি দর্শনীয় স্থান

সংক্ষেপে:
  1. জাফলং
  2. হাকালুকি হাও
  3. বিছানাকান্দি
  4. লাক্কাতুর চা বাগান
  5. রাতারগুল জলাবন
  6. মায়াবী ঝর্ণা
  7. লাল খাল
  8. পান্তুমাই ঝর্ণা
  9. টাঙ্গুয়ার হাওর
  10. নীলাদ্রি লেক
  11. জাদুকাটা নদী
  12. হযরত শাহজালাল (র:) এর মাজার
  13. হযরত শাহপরান (র:) এর মাজার

সাতটি স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
১. জাফলং

সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত স্থান হচ্ছে জাফলং। এটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে প্রায় 62 কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এর অবস্থান। এর সাথেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত। এখানে পাহাড় আর নদী একত্রে মিলিত হয়ে সৃষ্টি করেছে এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রতিবছর লাখো পর্যটক এসে উপস্থিত হয় এই পর্যটনকেন্দ্রে।

কিভাবে যাবেন?

জাফলং যেতে হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে সিলেটে। সিলেট শহর হতে জাফলং এর দূরত্ব প্রায় ৫৬ কিলোমিটার। সিলেট জেলা শহর হতে আপনি বাস, মাইক্রোবাস কিংবা সিএনজি করে যেতে পারবেন জাফলং। সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘন্টা।

বিশেষ কথা***

জাফলং এর তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতের সাথে পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়। জাফলং এর জিরো পয়েন্টে এই তামাবিল স্থলবন্দরের অবস্থান।

২. হাকালুকি হাওর

মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্থিত হাকালুকি হাওর যা বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হিসেবে পরিচিত।
হারটি পাঁচটি উপজেলা ও এগারোটি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত। এর আয়তন ১৮১১৫ হেক্টর। এতে রয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টি বিল যা প্রচুর পরিমাণে মৎস্য সম্পদে ভরপুর। শীতকালে এইসব বিলে হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটে। অতিথি পাখিদের বিচরণে হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়। বর্ষাকালে এই হাওরের চতুর্দিকে শুধু পানি আর পানির খেলা। যা সৃষ্টি করে প্রকৃতির এক অনবদ্য রূপ। 
এটি পূর্ব দিকে পাথারিয়া ও মাধব পাহাড় এবং পশ্চিম দিকে ভাটেরা পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকার সায়দাবাদ কিংবা যাত্রাবাড়ী কিংবা মহাখালী থেকে আসতে হবে কুলাউরা বা বড়লেখা, সেখান থেকে অটোতে করে যাওয়া যায় হালালকি হাওর। অটোতে ভাড়া নিবে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

বিশেষ কথা***

হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আপনি সেখানে ঘণ্টা হিসেবে নৌকা ভাড়া নিতে পারেন। ঘন্টা প্রতি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা নিবে। তবে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।

৩. বিছানাকান্দি

বিছানাকান্দি, যা জাফলং এর মত একটি পাথর ফোয়ারী। এটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত। খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুইপাশ থেকে এসে এক বিন্দুতে মিশেছে। এই পাহাড়ের খাজে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন সুউচ্চ ঝর্ণা। এখানে দেখতে পাবেন পাথরের উপর দিয়ে বই চলা পানি প্রবাহ, দেখতে পাবেন পাথরের গায়ে আটকে থাকা মেঘ আর পূর্ব দিক থেকে আশা বিয়ান নদীর জলরাশি। পাহাড়, নদী, মেঘ, ঝর্ণা সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক বৈচিত্রময় বন্ধনে ঘেরা এই বিছানাকান্দি।

কিভাবে যাবেন?

বিছানাকান্দি যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহরে। সিলেটের আমবারখানা সিএনজি স্টেশন থেকে লোকাল সিএনজিতে চড়ে (ভাড়া ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা জনপ্রতি) আপনাকে যেতে হবে হাদারপার নামক জায়গায়। সেখানকার নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে আপনি যেতে পারবেন বিছানাকান্দি মেইন পয়েন্ট। নৌকা ভাড়া লাগে প্রায় ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার মতো। তবে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।


বিশেষ কথা***

বিছানাকান্দি যাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময় এর চতুর্দিকে পানি আর পানি থাকার ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

৪. লাক্কাতুর চা বাগ

সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তকে ঘিরে রাখা সবুজ বনানীকেই মূলত লাক্কাতুর চা বাগান বলা হয়। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম চা বাগান। এখানে প্রতিবছর পাঁচ লক্ষ কেজি চা উৎপাদিত হয়। এর পাশেই রয়েছে মালনিছড়া চা বাগান। যা উপমহাদেশের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। মালতি ছাড়া আর লাক্কাতুর চা বাগানের মধ্যে ব্যবধান শুধু রাস্তার এপাশ ওপাশ।
এই বাগানে আরো রয়েছে কাঁঠাল, কমলা ও সুপারি বাগান। এখানে চন্দন গাছসহ অনেক ধরনের ঔষধি গাছ রয়েছে। এই বাগানের চা দেশীও চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।

কিভাবে যাবেন?

সিলেট শহর থেকে ওখানকার স্থানীয় পরিবহনে খুব সহজেই লাক্কাতুর চা বাগান যাওয়া যায়। আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজি পাওয়া যায় যা আপনাকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে দেবে লাক্কাতুর চা বাগান। সেখানে পৌঁছানোর পর সেখানকার চা শ্রমিক রাই গাইড হিসেবে আপনাকে ঘুরিয়ে দেখাবে চা বাগান।

বিশেষ কথা***

সবুজে ঘেরা এই চা বাগানের আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে বর্ষাকালে। বর্ষাকালে প্রকৃতি যেন নিজের মতো করে সাজায় এই লাক্কাতুর চা বাগানকে।

৫. রাতারাগুল জলাবন

সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত রাতারগুল মূলত একটি মিঠা পানির জলাবন। পুরো পৃথিবীতে মাত্র ২২ টি মিঠা পানির জলাবণ রয়েছে। তার মধ্যে রাতারগুল জলাবন অন্যতম।
সবুজে শ্যামলে ঘেরা এই অরণ্য গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। বছরের চার থেকে সাত মাস পানির নিচে থাকে এখানকার গাছপালা। এখানে দেখে মিলবে কাঠবিড়ালি, বানর, ভোঁদড়, বেজি, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। তাছাড়া বাকিদের মধ্যে রয়েছে সাদা বক, কানি বক, টিয়া, বুলবুলি, মাছরাঙ্গা, চিল, বাজ ইত্যাদি।
রাতারগুল বনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনাকে চড়তে হবে ডিঙ্গি নৌকায়। দুই পাশে সবুজে ঘেরা অরণ্যের মাঝখান দিয়ে যখন ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ঘুরবেন তখন মনে হবে প্রকৃতি যেন মমতাময়ী মায়ের কন্ঠে ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে তার কোলে তুলে নিয়েছে।

কিভাবে যাবেন?

সিলেটের আমবারখানা থেকে সিএনজি চড়ে যেতে হবে গোয়াইন ঘাটে। ভাড়া পড়বে 500 টাকার মতো। তারপর গোয়ানঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে যেতে হবে রাতারগুল বিট অফিস। নৌকা ভাড়া পড়বে প্রায় 800 থেকে 1500 টাকা। সেখান থেকে নৌকা নিয়ে ঢুকতে পারবেন বনে। নৌকায় ঘন্টা প্রতি ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

বিশেষ কথা***

শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনের ভেতরে ঢুকলে যাকে যাকে পাখি আপনার সামনে থেকে সরে গিয়ে আপনাকে পথ করে দেবে।

৬. লালখাল

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় লালখালের অবস্থান। এটি একটি পর্যটন এলাকা। এটি ভারতের চেরিপুঞ্জি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত। লালখালের পানির রং নীল। এই অঞ্চলটি পাহাড়, প্রাকৃতিক বন, চা বাগান ও নদী দিয়ে ঘেরা। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের মুগ্ধ করে বারবার।

কিভাবে যাবেন?

প্রথমে সিলেটের শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা অথবা জাফলং এর বাসে চড়ে যেতে হবে সারিঘাট। সেখান থেকে সড়ক পথে সিএনজি এবং নৌকা পথে নৌযান ভাড়া করে যেতে পারবেন লালখাল।

বিশেষ কথা***

যদি ভরা পূর্ণিমায় যেতে পারেন তাহলে জ্যোৎস্না ধোয়া নদীর রূপ আপনাকে এমনভাবে মুগ্ধ করবে যেন আপনি তা সারা জীবন স্মরণ রাখবেন।

৭. মায়াবী ঝর্না

মায়াবী ঝরনার আরেক নাম সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। জাফলং জিরো পয়েন্টের পাশেই মায়াবী ঝর্ণার অবস্থান। জাফলং থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে মায়াবী ঝর্নায় যেতে। এই ঝর্ণার তিনটি ধাপ রয়েছে। তৃতীয় ধাপে রয়েছে একটি সুরঙ্গ আর এই সুরঙ্গের শেষ এখনো অজানাই রয়ে গেছে।
বর্ষাকালে ঝরনাতে বেশি পানি থাকে তাই বর্ষাকালই ঝরনা দেখতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।

কিভাবে যাবেন?

মায়াবী ঝরনা দেখতে হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে সিলেটের জাফলং জিরো পয়েন্টে। তারপর সেখান থেকে নৌকা করে নদী পার হয়ে 10 মিনিট পায়ে হেঁটে আপনি পৌঁছে যাবেন মায়াবী ঝরনা

Post a Comment

0 Comments